
🌹পশুকে খাসী করানোর বৈধতা🌹
পশুকে খাসী করানো সাধারণ দৃষ্টিতে নাজায়েয। হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বি., হযরত আনাস রাদ্বি., মুজাহিদ রহ.সহ অনেকে মত্বলকান পশুকে খাসী করা মাকরুহ মনে করতেন। (তাফছিরে তাবারী)
এমনকি দুর্বল সনদে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবীজি (দঃ) মত্বলকান পশুকে খাসী করতে নিষেধ করেছেন। (বায়হাক্বী)
📖তবে ইমাম বায়হাক্বী রহ. বর্ণনা করেছেন, একদল মুতাকাদ্দিমীনগণ পশুকে খাসী করানো জায়েয বলেছেন। যেমন লক্ষ্য করুন-
وفي ذلك كالدلالة علي جواز خصاء البهائم واليه ذهب عروة بن الزبير والحسن والحسن وابن سرين وعمر بن عبد العزيز.
অর্থাৎ, অনুরূপ চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসী করা বৈধতার বিষয়ে দালাইল বিদ্যমান রয়েছে, ইহা গ্রহণ করেছেন হযরত উরওয়া ইবনু যুবাইর, হাসান বছরী, ইবনু সিরীন, উমর ইবনু আব্দিল আযিয রহ.। (বায়হাক্বী: মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হা/১৮৯৪১)
📖আইম্মায়ে কেরাম মানুষের প্রয়োজনে পশুকে খাসী করা মুবাহ বা বৈধ বলেছেন। কেননা মহান আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন, هو الذي خلق لكم ما في الارض جميعا
অর্থাৎ, জমীনে যা কিছু আছে সবই মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা বাকারা, ২৯)
মহান আল্লাহ তা'আলা মানুষের জন্যেই পশু সৃষ্টি করেছেন, পশুর জন্য মানুষকে নয়। তাই মানুষের প্রয়োজনে পশুকে খাসী করা বৈধ।
📖ইমাম আবু জাফর তাহাবী রহ. বলেছেন,
وقد روي في إباحة إخصاء البهائم عن جماعة من المتقدمين.
অর্থাৎ, একদল মুতাকাদ্দিমীন ইমামদের থেকে চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসীর করা বৈধতা সম্পর্কে রেওয়ায়েত বর্ণিত রয়েছে। (শারহু মাআনিল আসার, হা/৭১১৯)
📖অন্যান্য আইম্মায়ে কেরামগণ বলেছেন,
يمنع الخصاء مطلقا لكن الفقهاء رخصوا في خصاء البهائم للحاجة.
অর্থাৎ, সাধারণত পশুকে খাসী করানো নিষিদ্ধ তবে ফুকাহায়ে কেরাম মানুষের প্রয়োজনে চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসী করানোর অনুমতি দিয়েছেন। (তাফছিরে বায়জাবী, রুহুল মাআনী, তাফছিরে আবু সাউদ)
📖কেননা প্রখ্যাত তাবেঈ উরওয়া ইবনু যুবাইর, মুহাম্মদ ইবনে সিরীন, তাঊস, খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আযিয ও হাছান বছরী রহ. প্রয়োজনে পশুকে খাসী করা বৈধ বলেছেন। (দূর্রে মানসূর, মুছান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ, রুহুল মাআনী)
📖এজন্যে ইমাম আবুল হাছান কূদুরী রহ. বলেছেন,
ولا بأس بخصاء البهائم لانه يفعل للنفع.
অর্থাৎ, উপকারের জন্য পশুকে খাসী করাতে অসুবিধা নেই। (মুখতাছারুল কূদুরী)
📖ইমাম আবু বকর ইবনু আলী যুবাইদী রহ. তদীয় "জাওহারাতুন নাইয়্যারা" গ্রন্থে অনুরূপ বলেছেন। ইমাম আবুল বারাকাত আন নাসাফী রহ. বলেন,
بالخصاء وهو مباح في البهائم.
অর্থাৎ, পশুকে খাসী করা (প্রয়োজনে) মুবাহ বা বৈধ। (তাফছিরে নাছাফী)
📖ছাহেবে খাজেন ও ইমাম বাগভী (রঃ) অনুরুপ স্ব স্ব তাফছিরে বলেছেন। ইমাম বুরহান উদ্দিন নোমানী রহ. (ওফাত ৬১৬ হি.) তদীয় কিতাবে বলেছেন,
وعندنا لا بأس بإخصاء الحيوانات سوى بني آدم.
অর্থাৎ, বনী আদম ব্যতীত সকল প্রাণীকে (মানুষের প্রয়োজনে) খাসী করাতে কোন অসুবিধা নেই। (আল-মুহিতুল বুরহানী, ৫/৩৭৬)
অতএব, পশুকে মানুষের প্রয়োজনে খাসী করানো মুবাহ বা বৈধ। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে পশুকে খাসী করানো বৈধ নয়। মহান আল্লাহ তা'আলা সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক, আমিন।
✍️অধম- মুফ্তী মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জেহাদী
খাদেমঃ বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আটরশি পাক দরবার শরীফ, ফরিদপুর।
0 মন্তব্যসমূহ